স্টাফ রিপোর্টার ।।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম। তিনি জানান, খায়রুল হককে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জে তিনটি মামলা রয়েছে। এসব মামলার যেকোনো একটিতে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
বিচারপতি খায়রুল হক রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল মামলার মূল রায়দানকারী হিসেবে। আপিল বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে ফতোয়া অবৈধ ঘোষণার রায়ও তিনিই দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত থাকাকালীন তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় এবং সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় প্রদান করেন। এ ছাড়া ঢাকার চার নদী রক্ষা, স্বাধীনতার ঘোষক সংক্রান্ত বিতর্কসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ও দিয়েছেন তিনি।
তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে একটি রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায়। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে জালজালিয়াতির মাধ্যমে রায় দেওয়া এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল বারী ভূঁইয়া বাদী হয়ে এই মামলা করেন। ঢাকাতেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়।
বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর নিয়োগ কার্যকর হয়। ২০১১ সালের ১৭ মে, ৬৭ বছর পূর্ণ হলে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাঁকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাঁকে কয়েক দফা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
বিচারপতি খায়রুল হক ১৯৪৪ সালের ১৮ মে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রফিকুল হক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএল.বি এবং যুক্তরাজ্যের লিংকনস্ ইন থেকে বার-অ্যাট-ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় যুক্ত হয়ে ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর দীর্ঘ ২৫ বছর হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় সক্রিয় থাকার পর ১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং পরে ২০১০ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।
তাঁর কর্মজীবন যেমন প্রশংসিত, তেমনি রাজনৈতিকভাবে সমালোচিতও ছিল। বাংলা ভাষায় রায় প্রদান করে উচ্চ আদালতে বাংলার প্রচলনে ভূমিকা রাখায় তিনি প্রশংসিত হন। আবার সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত রায় এবং রাজনৈতিক পরিণতি ডেকে আনা কয়েকটি সিদ্ধান্তের জন্য তীব্র বিতর্কের জন্ম দেন। এখন নতুন করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও বিচারিক ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হলো।