স্টাফ রিপোর্টার ।।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার্স কারখানার ছয়তলা ভবনে গত বছরের ২৫ আগস্ট অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৮২ জন নিখোঁজ হন বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। সরকারি তদন্তেও এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে এক বছরে তাঁদের উদ্ধারে কোনো সরকারি তৎপরতা চালানো হয়নি।
প্রথমে লাশ চেয়েছিলেন স্বজনেরা। এক বছর পর তাঁদের দাবি—যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে, অন্তত পোড়া হাড়গোড়গুলো যেন উদ্ধার করা হয়।
ভোলার বোরহানউদ্দিনের ট্রাকচালক নূর হোসেন (৪২) সপরিবারে রূপগঞ্জে থাকতেন। ঘটনার রাতে ভগ্নিপতি রাসেলের সঙ্গে তিনি কারখানায় যান। এরপর দুজনই নিখোঁজ। স্ত্রী পারভীন বেগম বিভিন্ন হাসপাতাল, এমনকি কারাগারেও খোঁজ করেছেন। কোনো খবর পাননি।
ভাড়া বাসা রাখতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে এখন টিনশেড ঘরে থাকেন তিনি। সংসার চালাতে কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘এখন মনে হয়, ওরা কেউ বেঁচে নেই। পোড়া ভবনেই তাঁদের হাড়গোড় আটকে আছে।’’
নিখোঁজদের মৃত্যু সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ায় পরিবারগুলো নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। মৃত্যুসনদ না থাকায় ঋণ মওকুফ হয়নি, বিধবা ভাতা মেলেনি, এমনকি ধর্মীয় আচারও করতে পারেননি তাঁরা।

পুড়ে যাওয়া গাজী টায়ার্স ফ্যাক্টরি
পারভীনের মা খাদিজা বেগম ক্ষোভ ঝরিয়ে বলেন, ‘‘মইরা গেলে লাশটা থাকত। দাফন করতে পারতাম, মনটা শান্ত হতো।’’
অগ্নিকাণ্ডের পর জেলা প্রশাসনের আট সদস্যের কমিটি ১৮২ জনের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য দেয়। প্রতিবেদনে ভবন অপসারণ করে উদ্ধারকাজ চালানোর সুপারিশ করা হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তদন্তে জানা যায়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর কারখানায় লুটপাট শুরু হয়। মালিক ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর গ্রেপ্তারের পর ২৫ আগস্ট আবারও লুটপাট হয় এবং ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নিভতে সময় লাগে পাঁচ দিন।
বর্তমান জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘‘স্বজনেরা আবেদন করেছিলেন, পুলিশকে কাজ করতে বলেছি। তবে কোনো অগ্রগতি জানানো হয়নি।’’
পুলিশ জানায়, নিখোঁজ তালিকা ধরে অনুসন্ধান চলছে। ব্যবহৃত ফোন নম্বরের সর্বশেষ লোকেশন খোঁজা হচ্ছে। তবে কাউকেই শনাক্ত করা যায়নি।
গাজী গ্রুপের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ‘‘টানা সাত দিন লুটপাট হলেও প্রশাসনিক সহায়তা পাইনি। মালিক কারাগারে, কারখানাও বন্ধ।’’