টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ।।
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় ব্যক্তিগত একটি বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক হাসসান আতিক। রবিবার (৮ জুন) বিকেলে উপজেলার বাঘিল পূর্বপাড়ায় নিজ বাড়ির পাশে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। হামলাকারীদের আক্রমণ থেকে স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন তার স্ত্রীও।
আহত হাসসান আতিক বাঘিল পূর্বপাড়া এলাকার প্রবীণ শিক্ষক আব্দুস সামাদের ছেলে।
জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন হাসসান আতিক। তার বাড়ির সীমানা ঘেঁষে আনোয়ার হোসেন নামে এক প্রতিবেশী অনুমোদনহীনভাবে একটি মসলা ভাঙানোর মিল স্থাপন করেন। মিলটি চালু হওয়ার পর থেকেই মরিচের গুঁড়া ও ঝাঁঝ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তাদের বাড়ির পরিবেশে, যা পরিবারের সদস্যদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছিল।
ঘটনার দিন আতিকের এক বছরের শিশু সন্তান মরিচের ঝাঁঝে অস্বস্তি বোধ করে প্রচণ্ড কান্না শুরু করলে তিনি প্রতিবেশী আনোয়ারকে অনুরোধ করেন মিলটি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে। এতে আনোয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। আতিক মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করতে গেলে আনোয়ার তার স্ত্রী পেয়ারা বেগম ও মাকে নিয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালান। লোহার রেঞ্চ দিয়ে আঘাত করা হয় আতিকের শরীরে। স্ত্রী তাকে বাঁচাতে গেলে তিনিও মারধরের শিকার হন।
পরে পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং সাংবাদিক আতিককে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনার পর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সাংবাদিক হাসসান আতিক বলেন, “আমার বাড়ির পাশে অনুমোদনহীন মসলা মিল চালিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। রবিবার আমার শিশুটি কষ্টে কান্না করলে মিলটি সাময়িক বন্ধ রাখতে বলি। কিন্তু মিল মালিক বরং ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে। আমি বুঝে ওঠার আগেই লোহার রেঞ্চ দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “শুরুতে মিলটি ধান ভাঙানোর জন্য চালু হয়েছিল। পরে হঠাৎ মসলা ভাঙানোর মেশিন বসানো হয়। তখন বাধা দিলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মিল চালু রাখা হয়। আমরা ঢাকায় থাকি, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা থাকায় কোনো ঝামেলায় যেতে চাইনি।”
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইলিয়াস হোসেন বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আগেই সাংবাদিক হাসসান আতিক বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিলেন। এমন তুচ্ছ ঘটনায় তার ওপর হামলা অনভিপ্রেত।”
বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. রাফিউর রহমান বলেন, “হাসসান আতিকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
বাসাইল থানার ওসি জালাল উদ্দিন বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, সাংবাদিক হাসসান আতিক ঢাকাভিত্তিক দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকায় নিউজ এডিটর হিসেবে কর্মরত। তিনি একাধারে কবি ও লেখক হিসেবেও পরিচিত।