শনিবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৫

হানিমুনে গিয়ে খুন: স্বামী হত্যার ছক কষেছিলেন স্ত্রী!

by ঢাকাবার্তা
দম্পতির বিয়ের ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

মেঘালয়ের পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে হানিমুনে গিয়ে ভয়ঙ্কর এক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশী। প্রথমে নিখোঁজের ঘটনা বলে মনে হলেও, কয়েকদিনের মধ্যেই বেরিয়ে আসে নৃশংস এক ষড়যন্ত্রের চিত্র। আর সেই ষড়যন্ত্রের মূল নায়িকা স্বয়ং রাজার স্ত্রী—সোনম রঘুবংশী।

২৩ মে নবদম্পতি রাজা ও সোনম মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের চেরাপুঞ্জি এলাকায় ভ্রমণে যান। তার আগের দিন তারা নংরিয়াতে পৌঁছান এবং ২৩ তারিখে একটি হোমস্টে থেকে চেক-আউট করেন। এরপর থেকেই তাদের খোঁজ মেলেনি। একদিন পর সোহারারিম এলাকায় একটি পরিত্যক্ত স্কুটার উদ্ধার করে পুলিশ, যা তারা ভাড়া করেছিলেন। শুরু হয় বড় ধরনের তল্লাশি অভিযান। ঘটনাটি আরও রহস্যময় হয়ে ওঠে যখন ১০ দিন পর, ১ জুন, রাজার মরদেহ পাওয়া যায় ওয়েইসডং পার্কিং লটের নিচের গভীর খাদে। তার শরীরে ছিল ধারালো অস্ত্রের আঘাত। উদ্ধার হয় একটি ছুরিও।

ঘটনার পর থেকেই সোনম নিখোঁজ ছিলেন। অনেকেই ধারণা করছিলেন তিনিও হয়তো বিপদের শিকার হয়েছেন, এমনকি তার পরিবার থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়—মেয়েটিকে বাংলাদেশে পাচার করে দেওয়া হয়নি তো? কিন্তু রহস্যভেদ ঘটে সোনমের একটি ফোনকলের মাধ্যমে। গাজিপুরে থাকা অবস্থায় তিনি তার পরিবারকে ফোন করলে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয় ইন্দোর পুলিশকে। এরপর গাজিপুর থেকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তদন্তে ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে চাঞ্চল্যকর তথ্য—এই হত্যাকাণ্ডে সোনমের সরাসরি সম্পৃক্ততা।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সোনম স্বীকার করেন, তিনিই স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং ভাড়াটে খুনি দিয়ে সেই কাজটি করান। তিনি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন রাজ কুশওয়াহা নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। কিন্তু সামাজিক ও পারিবারিক কারণে বিয়ে হয় রাজা রঘুবংশীর সঙ্গে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় ক্ষোভ। অভিযোগ, রাজ কুশওয়াহার সহায়তায় মেঘালয়ের হানিমুনেই স্বামীকে হত্যা করার পরিকল্পনা নেন সোনম। মাঝারি সময় একসঙ্গে কাটিয়ে যখন তারা সোহরায় যান, তখনই রাজাকে হত্যা করে তার দেহ ফেলে দেওয়া হয় খাদে।

হত্যাকাণ্ডের পর আটক স্ত্রী

হত্যাকাণ্ডের পর আটক স্ত্রী

মেঘালয় পুলিশের ডিজিপি ইদাশিশা নোংরাং জানান, সোনমের দেওয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে—একজনকে উত্তরপ্রদেশ থেকে ও দুজনকে ইন্দোর থেকে। ধৃতরা স্বীকার করেছে, অর্থের বিনিময়ে তারা রাজাকে খুন করেছে।

এ ঘটনায় মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, মাত্র সাত দিনের মধ্যেই এই হত্যা রহস্যের বড় অংশ উন্মোচিত হয়েছে, যা পুলিশের সফলতা।

হানিমুনের মতো জীবনের মধুর একটি পর্যায়ে গিয়ে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং স্ত্রী-ই যে সেই হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী—এই খবর গোটা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এক নববিবাহিতা এমন ঠাণ্ডা মাথায় এমন নৃশংস পরিকল্পনা করতে পারলো? আবারও প্রমাণিত হলো, অপরাধের পরিকল্পনা যতই নিখুঁত হোক, একটিমাত্র ভুল কিংবা একটি ফোনই হতে পারে তার ভাঙনের সূচনা। আর এই ঘটনায় সেই ভাঙনের সূত্র হয় একটি কনফেশনাল ফোন কল। পুলিশ এখন পলাতক থাকা আরেকজন অভিযুক্তকে ধরার জন্য অভিযান চালাচ্ছে।

এই ঘটনার জেরে পাহাড়ের সৌন্দর্যের পেছনে ঢাকা পড়ে গেছে ভয়ংকর এক হত্যার গল্প। মেঘালয় এখন শুধু হানিমুন নয়, এক নৃশংস ষড়যন্ত্রের নীরব সাক্ষীও।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net