গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ।।
সেনা ও পুলিশের কড়া পাহারায় গোপালগঞ্জ ছেড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহিন জানিয়েছেন, আজ বুধবার বিকেল ৫টার পর ১৫ থেকে ১৬টি গাড়ির একটি বহরে তারা শহর ছাড়েন। ওই বহরে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ এনসিপির শীর্ষ নেতারা।
এর আগে দিনভর গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে ঘিরে শহরজুড়ে ঘটে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে আগুন এবং গুলি বিনিময়ের ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
দুপুর আড়াইটার দিকে পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ চলাকালে হঠাৎ করে হামলা শুরু হয়। ভাঙচুর করা হয় মঞ্চ, চেয়ার ছোড়া হয় কর্মীদের দিকে এবং মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণেরও খবর পাওয়া যায়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছেন এনসিপির নেতারা।
হামলার পর এনসিপির শীর্ষ নেতাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শহর ত্যাগের ব্যবস্থা করে সেনা ও পুলিশ।

গোপালগুঞ্জের উলপুরে জালিয়ে দেওয়া পুলিশের গাড়ি
সমাবেশস্থল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এনসিপির গাড়িবহরের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। লঞ্চঘাট ও কলেজ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
দলীয় নেতা সারজিস আলম ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, “পুলিশ দাঁড়িয়ে নাটক দেখছে, পিছু হটছে।” আখতার হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছে, বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।”
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “গোপালগঞ্জে এসসিপি’র কর্মসূচির ওপর বর্বরোচিত হামলা দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।”

হামলার শিকার ইউএনওর গাড়ি
অন্যদিকে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।” সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েত এখন সেখানে নিষিদ্ধ।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে দিনভর উত্তেজনা, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার পর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হলেও রাজনীতিতে এর প্রতিক্রিয়া বহুদূর গড়াবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ নতুন মাত্রা পেয়েছে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে।