স্টাফ রিপোর্টার ।।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং তার বোন হুসনা সিদ্দিকীকে একসঙ্গে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে সেগুনবাগিচায়। অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপকে অনেকে বলছেন ‘অস্বাভাবিক’ এবং ‘অপেশাদার’। প্রশ্ন উঠেছে— এতদিন সরকারের উপদেষ্টা ও আন্তর্জাতিক দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লুৎফে সিদ্দিকী এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে থাকা তার বোন হুসনা সিদ্দিকী কেন এখন রাষ্ট্রদূতের পদে আগ্রহী?
- লুৎফে সিদ্দিকী ও তার বোন হুসনা সিদ্দিকীকে একসঙ্গে রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব
- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘অস্বাভাবিক’ নিয়োগ নিয়ে তীব্র আলোচনা
- পেশাদার কূটনীতিকদের ক্ষোভ— বৈষম্য আরও বাড়বে
- ড. নিয়াজ আহমেদ খান যাচ্ছেন ডেনমার্কে রাষ্ট্রদূত হিসেবে
- লামিয়া মোর্শেদও রাষ্ট্রদূত পদে আগ্রহী, পছন্দ ইউরোপ

২০১৩ সালে এওয়াইবিআই সিদ্দিকী পরিবারের আয়োজনে মুহাম্মদ ইউনূসকে সংবর্ধনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে লুৎফে ও হুসনার মা রেহানা সিদ্দিকী প্রধান অতিথি ফজলে হাসান আবেদকে ক্রেস্ট উপহার দিচ্ছেন।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার আমলে (২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ – ৭ জুন ২০০০) পুলিশের সাবেক আইজিপি এওয়াইবিআই (আবু ইয়াহইয়া বুরহানুল ইসলাম) সিদ্দিকীর সন্তান লুৎফে সিদ্দিকী ও হুসনা সিদ্দিকী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা। লুৎফে সিদ্দিকী বর্তমানে উপদেষ্টা পদমর্যাদার বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন। অন্যদিকে তার বোন হুসনা সিদ্দিকী নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। তিনি নেদারল্যান্ডসেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হতে আগ্রহী। লুৎফে সিদ্দিকীর পছন্দের স্টেশন সিঙ্গাপুর বলে সূত্র জানায়।

পিতার সঙ্গে লুৎফে সিদ্দিকী
এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেতরে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। পেশাদার কূটনীতিকদের অভিযোগ— রাজনৈতিক ও পারিবারিক প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিনের পেশাজীবীদের জন্য নির্ধারিত রাষ্ট্রদূত পদগুলো হাতছাড়া হচ্ছে। তাদের মতে, ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের যে অঙ্গীকার ছিল বৈষম্য দূর করার, এই নিয়োগপ্রস্তাব সেই বৈষম্য আরও গভীর করছে। এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, “এরা সবাই ‘মাখন খাওয়া’। এতদিন গাছেরটা খেয়েছে, এখন তলারটা কুড়াবে। তাদের জীবনকে আরও রঙিন করতে এত রক্ত ঝরল নাকি?”
এদিকে, ডেনমার্কে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নাম প্রায় চূড়ান্ত। কোপেনহেগেনের সম্মতির (এগ্রিমো) জন্য ইতোমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অনুমোদন পেতে এক থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে।

পিতার সঙ্গে হুসনা সিদ্দিকী
প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও ইউনূস সেন্টারের সাবেক নির্বাহী পরিচালক লামিয়া মোর্শেদের নামও রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিবেচনায় আছে। তার পছন্দ ইউরোপ— যদিও সেখানে বর্তমানে কোনো শূন্য পদ নেই। সরকারি সূত্র বলছে, প্রয়োজন হলে ইউরোপ থেকে কাউকে সরিয়েও তাকে বসানো হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, কোপেনহেগেন ছাড়াও সিঙ্গাপুর, দ্য হেগ, থিম্পু, ইয়াঙ্গুন এবং তেহরানসহ কয়েকটি স্টেশন শূন্য রয়েছে বা শিগগিরই শূন্য হবে। তবে এসব স্টেশনে কাকে পাঠানো হবে তা নিয়ে এখনো কোনো ফাইলওয়ার্ক শুরু হয়নি।