নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রধানমন্ত্রী পেল দেশটি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি শপথ নেন। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল, সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল এবং জেনারেশন জেড আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সমঝোতার ভিত্তিতেই কারকির নাম ঘোষণা করা হয়। এ নিয়োগকে নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
৭৩ বছর বয়সী সুশীলা কারকি ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দায়িত্ব পালনের সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থান প্রশংসিত হয়। তরুণদের নেতৃত্বাধীন সাম্প্রতিক আন্দোলন তাঁকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। আন্দোলনকারীরা বলছেন, কারকি বর্তমান পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করবেন। শপথের পর ঘোষণা এসেছে, আগামী ৫ মার্চ ২০২৬ সালে নেপালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত মঙ্গলবার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। দুর্নীতি, বেকারত্ব ও ক্ষমতায় তরুণদের অংশগ্রহণের অভাবও আন্দোলনের মূল ইস্যুতে পরিণত হয়। বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ৫১ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ২১ জন বিক্ষোভকারী, ৯ জন কয়েদি ও ৩ জন পুলিশ। আহত হন আরও অন্তত এক হাজার ৩০০ জন। সহিংসতার মধ্যে দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ বন্দি পালিয়ে যায়, যাদের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ৫০০ জন এখনো পলাতক।

নেপালে আন্দোলন চলাকালের একটি দৃশ্য
বিক্ষোভে অলি সরকারের পতন হলেও সহিংসতা অব্যাহত থাকে। পার্লামেন্ট ভবন ও সরকারি ভবনে আগুন দেওয়া হয়, বিভিন্ন নেতার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হলেও আন্দোলন থামেনি। সেনাবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে পুলিশের সঙ্গে মিলে বিক্ষোভকারীদের ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নামে। গতকাল পর্যন্ত অন্তত ২৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
এই সহিংসতায় নেপালের পর্যটনশিল্প বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। অন্তত দুই ডজন হোটেল ভাঙচুর, লুট বা অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। শুধু কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেলেই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ বিলিয়ন রুপি। প্রায় দুই হাজার হোটেলকর্মী এখন কর্মসংস্থান সংকটে পড়েছেন। এ সময় কাঠমান্ডুর হায়াত রিজেন্সি হোটেল থেকে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের রাজেশ দেবী গোলা নামের এক নারী।
শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে নানা জল্পনার অবসান হয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল, ভাইস প্রেসিডেন্ট রাম সহায় যাদব, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাওয়াতসহ দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। ভারতের নেপালস্থ রাষ্ট্রদূত নবীন শ্রীবাস্তবও নতুন প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
সুশীলা কারকির নিয়োগ তরুণ প্রজন্মকে নতুন আশার আলো দেখালেও তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থান ও আপসহীন চরিত্র তাঁকে আন্দোলনকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে। তবে সমালোচকেরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকর নেতৃত্ব দিতে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যেতে হবে।