স্টাফ রিপোর্টার ।।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাবে সরকার, যাতে আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
আজ মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’-এর প্রথম বর্ষপূর্তিতে রাত ৮টা ২০ মিনিটে দেওয়া এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচারিত হয়। এর আগে বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তিনি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন।
ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সংস্কার, বিচার এবং জাতীয় নির্বাচন—এই তিনটি অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব। তিনি উল্লেখ করেন, “আজকের এ ঐতিহাসিক দিনে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করছি। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব।”
তিনি আরও জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ জানানো হবে, যাতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, রমজানের আগে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। মাত্র তিন দিনের মাথায় অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তখন থেকেই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার ছিল। আন্দোলনের উত্তাপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস লন্ডনে বৈঠক করেন। ১৩ জুন দেওয়া যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে সরকার। আজকের ভাষণে সেই ঘোষণার নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার কথা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আগামীকাল থেকেই মানসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু হবে। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন, যেন এই নির্বাচন একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার পথে সহায়ক হয়।
তিনি আরও বলেন, “গত ১৫ বছরে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। এবারের নির্বাচন হবে আনন্দের, হবে উৎসবের। এমনকি যারা জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে যাচ্ছে, তারাও উৎসবমুখর পরিবেশে অংশ নেবে। যারা ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিলেন কিন্তু ৫, ১০ বা ১৫ বছরেও ভোট দিতে পারেননি, তারাও এবার সেই অধিকার ফিরে পাবেন।”
ভোটের দিনকে তিনি ‘ঈদের মতো উৎসব’ হিসেবে দেখতে চান বলে মন্তব্য করেন, “আপনারা সবাই সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, এ হবে আমাদের গণতন্ত্রের উৎসব।”
ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশে সংঘাত ও সহিংসতার পেছনে বারবার ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন দায়ী। গায়ের জোরে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিণতি কী হয়, তা ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, “আমরা আর কলঙ্কিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চাই না।”
তিনি সতর্ক করেন, কিছু গোষ্ঠী নির্বাচন ব্যাহত করতে দেশ-বিদেশ থেকে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। “তাদের লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলা। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন তারা কোনো সুযোগ না পায়। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করতে পারলে অপশক্তির পরাজয় নিশ্চিত হবে।”
নির্বাচনসংক্রান্ত পরামর্শ ও উদ্বেগ জানাতে একটি অ্যাপ তৈরির ঘোষণাও দেন প্রধান উপদেষ্টা। এর মাধ্যমে জনগণ তাঁদের মতামত, শঙ্কা ও প্রস্তাব সরাসরি জানাতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যেন তরুণ ও নারী ভোটাররা উপেক্ষিত না হন। যারা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে, তারাই বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাদের সেই সুযোগ দিতে হবে।”
ভাষণের শেষ দিকে তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে সবাই যেন নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই সবার মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব—এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”