ফেনী প্রতিনিধি ।।
খালেদা জিয়ার আসন বলে পরিচিত ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম) নিয়ে নতুন করে সরগরম হয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতি। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই দাঁড়াবেন নাকি বিকল্প কেউ—এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে।
আওয়ামী লীগের দেড় যুগের শাসনের মধ্যে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে এই আসনে অনেক আগে থেকেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অ্যাডভোকেট কালাম আহমেদ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি খেলাফত মজলিস (মামুনুল হক), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোও প্রার্থী ঠিক করে মাঠে সক্রিয় হওয়ার আভাস দিয়েছে।
তবে এ আসনে এখনও কমিটি করতে পারেনি বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসা তরুণদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম এনসিপি। ফলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছেন তারা।
এবার ঈদুল আজহা ঘিরে নির্বাচনি মাঠে তৎপরতা নতুন মাত্রা পায়। সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, হাটবাজারে প্রচার, ব্যানার-পোস্টারে প্রচারণায় সরব ছিলেন। অনেকে কৌশলে নিজেদের প্রার্থিতা জানিয়ে দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ শহীদ নেতাকর্মীদের পরিবারে সহমর্মিতা জানিয়ে আবেগময় বার্তা ছড়িয়েছেন। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন পর ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশে রূপ নেয় ফেনী-১ এলাকা।
এ আসনে ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রথমবার জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে ফের বিজয়ী হন। ২০০৮ সালেও বিপুল ভোটে জয় পান তিনি। তবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোটে বিএনপি অংশ না নিলেও ক্ষমতাসীনরা এখানকার জনপ্রিয়তা পায়নি—বরং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী এমপি ছয় মাস না যেতেই গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের বড় অংশ এখনও চায় খালেদা জিয়াই যেন এখানে প্রার্থী হন। তবে শারীরিক কারণে তিনি অক্ষম হলে সম্ভাব্য হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মরহুম কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল আহমেদ, সাংবাদিক নেতা কামাল উদ্দিন সবুজ এবং প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দারের ছেলে ব্যারিস্টার শামস ইস্কান্দার।
২০১৮ সালে এখান থেকে নির্বাচন করা রফিকুল আলম মজনুও এবার দলীয় নির্দেশে প্রস্তুত আছেন বলে জানান। অন্যদিকে ইসলামপন্থী দলগুলো তাদের একক প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে জোর দিচ্ছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ১৯৭৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেউ এই আসনে জয়ী হতে পারেননি। অর্থাৎ, ক্ষমতাসীন দলের জন্য এখনও এখানে কাঙ্ক্ষিত ভিত্তি গড়ে ওঠেনি।
বর্তমানে এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৬১ জন। খালেদা জিয়ার রাজনীতির শেকড়ের এই আসনে এবার নতুন করে উত্তেজনা, কৌশল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার রূপরেখা তৈরি হচ্ছে—যা আগাম নির্বাচনের অন্যতম ‘হটসিট’ হিসেবে ফেনী-১ কে সামনে নিয়ে এসেছে।