ফারহানা আক্তার ।।
দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের পর এক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে, ভুক্তভোগী হচ্ছেন নারীরা। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ পারিবারিক ভাবে নারী বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হোন, বাদ যায় না গনপরিবহনেও। এসব ঘটনায় আবার প্রতিকার ব্যবস্থাও রয়েছে, তবুও যতদিন যাচ্ছে ততই যেনো নারীর প্রতি হয়রানি বা সহিংসতা বেড়ে চলছে। হয়রানি বা সহিংসতার নতুন নতুন মাধ্যমও সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- ঘরে, বাইরে সহ অনলাইনে।
তাহলে নারীর নিরাপত্তাটা কোথায়?
নারীর প্রতি সহিংসতার ধরন গুলো বিভিন্ন রুপের হয়, শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, যৌন এবং অনলাইন ভিত্তিক। ইদানিং প্রযুক্তির সহজবোধ্যতার কারণে নারীর প্রতি হয়রানির মাত্রাটাও ভিন্ন হয়ে গিয়েছে। নারী তার পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং গনপরিবহনে নানা ভাবে হয়রানির বা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এই সহিংসতা প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে যেমন- সহিংসতার ব্যাপারে সব জায়গায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা এবং আইন অনুযায়ী অভিযোগ কমিটি গঠন করে অভিযোগ অনুযায়ী শাস্তির বিধান করা।
২০০৯ হাইকোর্ড বিভাগের আদেশ ও নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি( প্রতিরোধ কমিটি) নামে একটি অভ্যন্তরিন কমিটি গঠন করা হবে । হাইকোর্ড বিভাগের আদেশ ও নির্দেশনা অনুযায়ী এ কমিটি গঠিত হবে। প্রতিরোথ কমিটির যৌন হয়রানি বা যৌন সহিংসতার অভিযোগ গ্রহন, তদন্ত পরিচালনা এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ প্রদানের ক্ষমতা থাকবে।
বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ (সংশোধিত- ২০১৩), ধারা- ৩৩২ এ মহিলার প্রতি আচরনঃ
কোনো প্রতিষ্ঠানের কোন কাজে কোন মহিলা নিযুক্ত থাকিলে তিনি যে পদমর্যাদাতেই হোন না কেন তার প্রতি উক্ত প্রতিষ্ঠানের অন্য কেহ এমন কোনো আচরণ করিতে পারিবেন না যাহা অশ্লীল কিংবা অভদ্রজনিত বলিয়া গণ্য হইতে পারে, কিংবা যাহা উক্ত মহিলার শালীনতা ও সম্ভ্রমের পরিপন্থী-
ব্যাখ্যা- (ক) অনাকাঙ্খিত যৌন আচরণ যেমন- শারীরিক র্স্পশ বা অনুরূপ প্রচেষ্ঠা (খ) প্রাতিষ্ঠানিক এবং পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করিয়া কাহারো সহিত যৌনসর্ম্পক স্থাপনের চেষ্টা; (গ) নিপীড়নমূলক উক্তি; (ঘ) যৌন সুযোগ লাভের জন্য অবৈধ প্রস্তাব; (ঙ) অশালীন ভঙ্গি, অশালীন ভাষা , যৌন ইঙ্গিতমূলক ভাষা ব্যবহার করিয়া ঠাট্টা বা উপহাস করা (জ) চিঠি, টেলিফোন ,মোবাইল, এসএমএস, ছবি, নোটিশ, কার্টুন, চেয়ার-টেবিলে, নোটিশ বোর্ডে, অফিসে, দেয়ালে যৌন ইঙ্গিতমূলক অপমানজনক কোন কিছু লেখা;
এছাড়াও আরোও বিভিন্ন ধরনের নীপিড়নমূলক উক্তি বা কর্ম যা যৌনহয়রানির আওতাভুক্ত।
এছাড়া একজন নারীকে সমাজের চোখে দেখার প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গি, ধারণা, আচরণ গঠিত হয়, পরিবারের, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এবং কর্মক্ষেত্রে। আমাদের নতুন প্রজ›ম এই সমাজে বেড়ে উঠার সময় একজন নারীরে যে ভাবে দেখে এবং সমাজের মানুষ নারীর প্রতি কী ধরণের আচরণ করছে সেটা যেভাবে দেখে বড় হয় সেও নারীকে বড় হয়ে এই আচরণ ফেরত দেয়। নারীর প্রতি এই সহিংসতামূলক আচরণ নীপিড়ন নারীর ভবিষ্যৎত গতিপথ বাধাই দেয় না সাথে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ করে। একজন নারী তার পরিবারে , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তা না পায় তাহলে সে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরে, এক সময় এই মানসিক অবস্থা রুপ নেয় শারীরিক অসুস্থতায় যা অর্থনীতিতেও নারীর প্রতি এই সহিংসতার প্রভাব বিস্তার করে। নারীর প্রতি এই সহিংসতার বা হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধ করার সাথে-সাথে সমাজের প্রতিবন্ধকতা রুখে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন লিঙ্গিয় সমতা প্রতিষ্ঠা করা। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব যতটা কম প্রয়োগ করা যাবে সমাজে নারীর প্রতি হয়রানি বা সহিংসতা প্রতিরোধ করে একটা সুষ্ঠ, সুন্দর সমাজ গঠনে নারী তার নিরাপত্তা নিয়ে ভূমিকা পালন করতে পারবে। নারী সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে যেয়ে শুধু সমাজে নয় বাধার শিকার হয় পরিবারেও। প্রযুক্তির হাতছানিতে খুব সহজেই একজন নারীকে মেসেজের মাধ্যমে বা ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নীপিড়নমূলক উক্তি পাঠায় যা দেখে নারী মানসিকভাবে অসুস্থবোধ করে, সেই অসুস্থতা নারী কারো সাথে মনখুলে শেয়ার করতে পারেনা এতে করে সে দিনের পর দিন হতাশায় আক্রান্ত হয়। শুধু প্রযুক্তি নয় নারী সহিংসতার শিকার হয় সমাজের বিভিন্ন ধাপে এটাও হতাশার কারণ। এই হতাশা থেকে দেখা দেয় শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা এমন হয় সে নিজেকে শেষ করে দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। বর্তমানে আমরা সেই চিত্র দেখতে পাই পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং গনপরিবহনে। এই বিরম্বনা থেকে নারী কবে রেহাই পাবে?
নারী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে বারংবার সমাজের কিছু কুলশিত মানুষের চোখে পরে যাচ্ছে, পরে যাচ্ছে তাদের অসুস্থ মানসিকতার কবলে। এতে করে নারী নিজেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উপায় বের করেও শেষ রক্ষা করতে পারছেনা। কিছুদিন আগে আমরা ঘটা করে নারী দিবস পালন করলাম, আমরা কথায় বলি নারী স্বাধীন। নারীর কতটুকু স্বাধীন, নারী কেনো তার এত সুন্দর জীবনটাকে শেষ করে দিতে চায়? আমাদের সমাজটা নারী কে কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পেরেছে? আর কত নারী এইভাবে নিজেকে শেষ করে দিলে সমাজের মানুষের বন্ধ চোখ খুলবে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নবগঠিত হয়। মা-বোনদের সম্মান হারানোর বেদনা এখনো তাড়া করে বেড়ায় এই সমাজকে তাহলে এই স্বাধীন দেশে এই নারীকে কেনো যৌন হয়রানির জন্য প্রাণ দিতে হয়?
লেখক : শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মী