সাগর ইসলাম ।।
ঢাকা শহরের সড়ক ব্যবস্থার অন্যতম আলোচিত সমস্যা হচ্ছে যানজট। আওয়ামী আমলের একসময় ব্যাটারিচালিত রিকশা শহরের মূল সড়কে ওঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে, এটি এমন কোনো কার্যকর সমাধান হয়নি, যা শহরের যানজট কমাতে সক্ষম হয়েছে। বরং সড়ক ব্যবস্থায় একাধিক পরিবর্তন ও সংস্কারের পরেও সমস্যা তেমন সমাধান হয়নি। ঢাকার যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ যে মাত্রাতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা, সে বিষয়টি অনেকেই অগ্রাহ্য করে থাকেন। তবে, ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর নিষেধাজ্ঞা বা বাইকারদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে কেবলমাত্র একটি দিককে লক্ষ্যমাত্রা করে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ঢাকা শহরের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে যাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ থাকে, তারা হলেন বাইকাররা। অটো রিকশার মতো বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যতটা থাকে, তার চেয়ে অনেক বেশি অভিযোগ বাইক চালকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই সমস্যাগুলোর সমাধান কোথায়?
সমস্যা সমাধানে কেবল জ্ঞান দিয়েই থামবেন না, প্রজ্ঞা ও সৃজনশীলতা দরকার। অটো রিকশার গতি এবং সৃষ্ট দুর্ঘটনার পেছনে মূলত ডিজাইন ও ট্রাফিক সিস্টেমের সমস্যা আছে। প্রযুক্তির উন্নতি এবং ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য নিয়ে অটো রিকশার ডিজাইন আপডেট করা যেতে পারে, যা অধিক নিরাপদ এবং ট্রাফিক সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। শুধু পায়ে চালানো রিকশা নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে, এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমায়।
একইভাবে, সড়ক ব্যবস্থায় লেন ব্যবস্থা চালু করা এবং রাস্তার ট্রাফিক সিস্টেম উন্নত করাও অপরিহার্য। সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিক উপায় আছে, এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এসব উপায় বাস্তবায়ন করা জরুরি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এমন একটা সমাধান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। আওয়ামী আমলে যা হয়েছে, তা হলো রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং পুলিশের মাধ্যমে জনগণের ওপর আক্রমণ। এই ধরনের শক্তির অপব্যবহার দীর্ঘমেয়াদে কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান না এনে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে। একে ‘পিটুনির সংস্কৃতি’ বললে ভুল হবে না।
এই পদ্ধতি হয়তো কিছুক্ষণের জন্য সমস্যার সাময়িক সমাধান দিতে পারে, তবে এর ফলে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তা একসময় বড় ধরনের সমস্যায় রূপ নেবে, যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, রাষ্ট্রের শক্তির অপব্যবহার রাষ্ট্রের ভিতকেই দুর্বল করে দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার শাসনামলের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এই শিক্ষা পেয়েছি, এবং বর্তমান শাসনেও যদি একই পথে হাঁটা হয়, তবে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
তাহলে, কীভাবে সমস্যা সমাধান করা যাবে? এটি শুধু রাজনৈতিক না, বরং সুশাসন ও সৃজনশীলতার প্রয়োগের বিষয়। রাষ্ট্র যদি জনগণের জন্য কল্যাণকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে তা কেবল দুর্ঘটনা এবং যানজট সমস্যার সমাধানই করবে না, বরং দেশের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেখক : সমাজকর্মী ও সংগঠক