বাসস ।।
দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া গুমের পেছনে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, র্যাব, ডিবি, সিটিটিসি এবং সামরিক ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে—এমনটাই উঠে এসেছে গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকাংশ গুমের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও গুম হওয়া ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই দায়ী করেছেন। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, র্যাব, ডিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই ও বিজিবির সদস্যরা।
ডিজিএফআই ও এনএসআই-এর হাতে আটক, অপহরণ ও জিজ্ঞাসাবাদের অভিযোগও রয়েছে। অথচ সংবিধান অনুযায়ী এসব সংস্থার গ্রেপ্তার বা আটক করার ক্ষমতা নেই। এই অবৈধ কার্যক্রম আইনবহির্ভূত সমান্তরাল শক্তির অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে দায়িত্বের বাইরে গিয়ে অভিযান চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে এই রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়।
২০০৯ সালের পর থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ বাড়ে। পুলিশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে থাকে এবং বিরোধী দল ও নাগরিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে সহিংস দমন চালায়। ‘ক্রসফায়ার’ সংস্কৃতি, হেফাজতে নির্যাতন এবং মতপ্রকাশের দমন ছিল নিয়মিত ঘটনা।
২০০৪ সালে গঠিত র্যাব অপরাধ দমনের দায়িত্বে থাকলেও অল্প সময়েই গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠে। কুর্মিটোলার টিএফআই সেল ছিল গোপন আটকের অন্যতম জায়গা। রাজনৈতিক বিরোধী, মানবাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিকদের দমনেও র্যাবকে ব্যবহার করা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ—র্যাব বিলুপ্ত না হলে দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ হবে না।
এনএসআইয়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধীদের নজরদারি ও দমন, সংবিধানবহির্ভূত ক্ষমতা প্রয়োগ এবং অস্বচ্ছ কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে। কমিশনের মতে, এ সংস্থাকে জবাবদিহিমূলক ও সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় আনতে আইনি সংস্কার জরুরি।
২০১৬ সালে গঠিত সিটিটিসি বহু ভুয়া মামলা, জোরপূর্বক গুম এবং হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত। এর সদস্যরা গোপনে কাজ করে, কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণকে কিছু জানানো হয় না। অর্থপূর্ণ জবাবদিহির ব্যবস্থাও নেই।