কুররাতুল আইন ।।
রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট রোড এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি (৩৩) গুরুতর আহত হয়েছেন। জুমার নামাজ শেষে শুক্রবার দুপুরে রিকশাযোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে আসা দুজন মুখোশধারী হামলাকারী কাছ থেকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। গুলিটি তার বাম কানের নিচ দিয়ে মাথার ভেতরে ঢুকে যায়।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। জরুরি বিভাগে সিপিআর দেওয়ার পর কিছুটা প্রেসার ফেরে। সিটিস্ক্যানে দেখা যায়, মাথার ভেতরে বুলেট রয়েছে। পরে তাকে নিউরো সার্জারি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় এবং তার মাথায় অস্ত্রোপচার চলছে বলে জানান ডা. মোস্তাক আহমেদ। ঢাকা মেডিকেল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “হাদির অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি।”
- ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ।
- হামলা ঘটে বিজয়নগর কালভার্ট এলাকায়, মোটরসাইকেল থেকে লক্ষ্য করে গুলি।
- হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে; অবস্থা ক্রিটিক্যাল, নিউরো-সার্জারি বিভাগে অস্ত্রোপচার চলছে।
- প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুত তদন্ত এবং সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন।
- বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল হামলার তীব্র নিন্দা ও দ্রুত তদন্তের দাবি করেছেন।
- দেশের রাজনীতিকরা ও সাধারণ মানুষ হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে তিনটি মোটরসাইকেলে করে দুর্বৃত্তরা আসে। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়।
হাদিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তার সহযোগী মিসবাহ জানান, জুমার নামাজের পর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌঁছাতেই হামলাকারীরা খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ে।

নির্বাচনী প্রচারে হাদি, সেগুনবাগিচায়। গতকাল তোলা ছবি।
হাদির সহকর্মীরা বলেন, প্রতিদিনের মতোই তারা নির্বাচনী প্রচারণায় বের হয়েছিলেন। পরিকল্পনা ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্র হয়ে প্রচারণা শুরু করবেন। কিন্তু পথেই হামলার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, “নির্বাচনী পরিবেশে এমন সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য এবং দুঃখজনক।” তিনি হাদির সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত তদন্ত করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের কঠোর নির্দেশনা দেন।
জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানও এক বিবৃতিতে ঘটনাটির নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে এ ধরনের সহিংসতা কখনো কাম্য নয়।” তিনি দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানান।

শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ফটো
হাদি এবং এর আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনে দলীয় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এটি নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার নীলনকশা।” তিনি দুই হামলার দ্রুত তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
এক বিবৃতিতে বিএনপি বলেছে, এই হামলা “সুদূরপ্রসারী অশুভ পরিকল্পনার অংশ”, যার উদ্দেশ্য নির্বাচনকে নস্যাৎ করা। বিবৃতিতে বলা হয়, সমাজে ভয় তৈরি করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
শুক্রবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় রিকশাযোগে চলার সময় মুখোশ ও হেলমেট পরা দুই হামলাকারী মোটরসাইকেলে এসে হাদির মাথা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরই পথচারী ও সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হামলার কারণ বা কারা দায়ী—তা এখনো স্পষ্ট নয়, তদন্ত চলছে।
