চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ।।
দুপুর ১টা বাজতেই চট্টগ্রামের লোহাগাড়া সদরের কর্নেল (অব.) অলি আহমদ স্টেডিয়ামে জড়ো হতে থাকেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ। অল্প সময়ের মধ্যে পুরো মাঠ কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। দুপুর ২টায় পুলিশ পাহারায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মরদেহ মাঠে পৌঁছালে পরিবেশ আরও ভারী হয়ে ওঠে। মাঠজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শোক। মুসল্লিদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন আলিফ।
দুপুর আড়াইটায় মাঠেই অনুষ্ঠিত হয় নামাজে জানাজা। ইমামতি করেন বটতলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মওলানা ড. মাহমুদুল হক ওসমানী। জানাজার পর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতিতে।
গ্রামে পৌঁছে সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। নিহতের পিতা জামাল উদ্দিন, মা হোসনে আরা বেগম ও স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন শোকের ভারে বারবার মূর্ছা যান। স্বজনরা জানান, সাইফুলের অনাগত সন্তানের মুখ দেখার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তার দুই বছরের কন্যা তাজকিয়া বোঝে না তার বাবা আর নেই। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা শিশুটির নিষ্পাপ চোখ দেখে সবাই আরও মর্মাহত হয়ে ওঠে।

সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল।
বিকাল পৌনে ৫টায় ফারাঙ্গা পশ্চিম কূল হযরত আব্দুল লতিফ শাহ (রা.)-এর মাজার প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পটভূমি
গতকাল চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশমুখে সংঘর্ষ চলাকালে রঙ্গম কনভেনশন হলের পেছনে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি ঘটে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চলাকালে।
সাইফুলের জীবন ও কর্ম
সাইফুল ইসলাম আলিফ লোহাগাড়ার আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেন। ২০১৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করছিলেন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান।

সাইফুল ইসলাম আলিফের কবরস্তানে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের মোনাজাত।
স্বজনদের দাবি
নিহতের স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনের বড় ভাই তারেকুল ইসলাম বলেন, “আমার বোনের জামাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা তাকে তার অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে দেয়নি। আমরা অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
স্বজনদের ভাষ্যমতে, সাইফুল একজন নম্র, ভদ্র ও নামাজি ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।