বিশেষ প্রতিনিধি ।।
জনতা ব্যাংকে যেখানে সাধারণ ঋণ আবেদনকারীদের পাঁচ ধাপের যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেখানে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক অ্যাননটেক্স গ্রুপের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি—ফলে প্রায় ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, আগের ঋণ পরিশোধ না করেও।
এই ঋণ ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি হওয়ায়, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনে নির্ধারিত সিঙ্গেল বোরোয়ার এক্সপোজার সীমা লঙ্ঘন করেছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জনতা ভবন করপোরেট শাখা থেকে এই বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়।
তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক ও পরে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান এমডি আব্দুছ সালাম আজাদ। তার সময়ে অ্যাননটেক্সের বেশিরভাগ ঋণ অনুমোদিত হয়। সাধারণত এক কোটি টাকার বেশি ঋণের প্রস্তাব বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হয় এবং সবগুলো ঋণ বোর্ড অনুমোদন দেয়।
সেই সময়ে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত (২০০৯–২০১৪) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এম আমিনুর রহমান (২০০৮–২০১৪)।
২০১৫ সালে অ্যাননটেক্স ১-২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ঋণ পুনঃগঠন প্যাকেজে ১,০৯৫ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করে, যেখানে সাধারণ নিয়মে ১০-১৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট প্রয়োজন। কিন্তু তারা কোনো কিস্তি পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটি ডিফল্টারে পরিণত হয়।
বর্তমান এমডি আজাদ বলেন, ঋণের বিপরীতে যথাযথ জামানত ছিল এবং কিছু অর্থও আদায় করা হয়েছে (৩৫০ কোটি টাকা)। তবে তৎকালীন চেয়ারম্যান ওয়াহিদ-উজ-জামান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ব্যবসা থেকে কোনো কিস্তি দেওয়া হয়নি; বরং নতুন ঋণ দিয়ে আগের ঋণ সমন্বয় করা হয়েছে।
অ্যাননটেক্সের সক্ষমতা নিয়ে বারকাত বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপীয় মানে শিল্প কারখানা স্থাপন করেছে এবং তার সময়ে ঋণ পরিশোধ ভালো ছিল। তবে তিনি স্বয়ং কারখানা পরিদর্শন করেননি।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৪ সালে একবার গ্যালাক্সি সুয়েটারস ও ইয়ার্ন ডাইং (অ্যাননটেক্সের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান)–কে ঋণ দিতে অনুমতি দিলেও শর্ত দিয়েছিল—সিঙ্গেল বোরোয়ার সীমা সমন্বয়ের আগ পর্যন্ত নতুন ঋণ দেওয়া যাবে না। জনতা ব্যাংক সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নতুন ঋণ দিতে থাকে।
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যাননটেক্স গ্রুপ বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং ঢাকা চেম্বারের সদস্য। প্রতিষ্ঠানের এমডি হলেন ঢাকাভিত্তিক ব্যবসায়ী মো. ইউনুস (বাদল), যাকে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঋণ প্রক্রিয়া, সুশাসন, এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।