ঢাকাবার্তা ডেস্ক ।।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ইতিহাসে আজকের দিনটি নতুন আলোর স্বপ্ন বয়ে আনছে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশের নাগরিকরা আজ এক অন্যরকম অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দীর্ঘ দমন-পীড়নের পর খবর এসেছে, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এই খবরের পর বিশ্বজুড়ে সিরিয়ানদের মধ্যে যেন এক ঈদের আমেজ তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর বিজয়ের বার্তা
২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ধীরে ধীরে এক নির্মম সংকটে পরিণত হয়। গণতন্ত্রের দাবিতে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করেন আসাদ সরকার। তার শাসনামলে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছেন, গৃহহীন হয়েছেন প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী। অত্যাচার, নির্যাতন ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলেও বাশার আল-আসাদ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
কিন্তু এই দীর্ঘ যুদ্ধে সিরিয়ার জনগণের সংগ্রামের অদম্য স্পৃহা একদিন তাদের জয়ের পথে নিয়ে আসবে, এই বিশ্বাস তারা কখনও হারায়নি। অবশেষে সেই দিনের আগমন ঘটল।

বাশার আল-আসাদ
কীভাবে পালালেন আসাদ?
সূত্র জানাচ্ছে, গত কয়েক সপ্তাহে সিরিয়ার বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহীরা ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক চাপ এবং নিজের বাহিনীর অনাস্থার মুখে বাশার আল-আসাদ পরিবারসহ সিরিয়া ত্যাগ করেছেন। একটি অজ্ঞাতস্থানে আশ্রয় নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই সিরিয়ায় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে উদযাপন
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিরিয়ান শরণার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, “এটি আমাদের জীবনের সেরা দিন।” অন্যদিকে দেশের ভেতরেও মানুষ রাস্তায় নেমে আসাদ বিরোধী স্লোগান দিয়ে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।
প্রবাসে থাকা এক সিরিয়ান শরণার্থী বলেন, “আমাদের ঈদ হয় না অনেক বছর। আজ মনে হচ্ছে আমরা সত্যিকারের স্বাধীনতা পেয়েছি।”
আশা ও পুনর্গঠনের পথে সিরিয়া
বাশার আল-আসাদের বিদায় সিরিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলেও সামনে রয়েছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। দেশটিকে পুনর্গঠন, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সকল সম্প্রদায়ের জন্য একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অভ্যন্তরীণ ঐক্য।
তবুও আজকের দিনটি সিরিয়ান জনগণের সংগ্রামের বিজয়গাথা হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে। তারা প্রমাণ করেছেন, অন্যায় যতই শক্তিশালী হোক, সত্য ও ন্যায় একদিন জয়ী হবেই।
আজকের দিনটি সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি নতুন সূর্যের আলো। আর বিশ্ববাসীর কাছে এটি এক চিরন্তন সত্যের উদাহরণ—সংগ্রাম কখনও বৃথা যায় না।