স্টাফ রিপোর্টার ।।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম সেনাপ্রধান, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, এবং সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ (বীর উত্তম) আর নেই। আজ রোববার (২৬ জানুয়ারি ২০২৫) সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
১৯৩৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা কে এম সফিউল্লাহ মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বীর উত্তম খেতাব অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে “এস ফোর্স” নামে একটি বিশেষ ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেন।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে প্রথম বিদ্রোহ সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৪ এপ্রিল তাঁর নেতৃত্বে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ ঘোষণা করে। যুদ্ধ চলাকালীন তিনি টেলিয়াপাড়ায় ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে একটি ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা এস ফোর্স নামে পরিচিত।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং একই বছরের অক্টোবরে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পান। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাপ্রধান ছিলেন। ওই ঘটনায় তিনি পূর্বপরিকল্পনার বিষয়ে অবগত ছিলেন না এবং ঘটনাটি প্রতিরোধে ব্যর্থ হন। এর পর ২৫ আগস্ট তাঁকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রবাসে পাঠানো হয়।
সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন ও ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কে এম সফিউল্লাহর স্ত্রী সাইদা আখতার। তাঁদের তিন কন্যা এবং এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
তিনি ২ জানুয়ারি ২০২৫ সালে অসুস্থ অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন এবং আজ সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন।