স্টাফ রিপোর্টার ।।
নারী অধিকার, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস একান্ত আলাপ করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি নারীর পোশাক নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, ফ্যাসিবাদী মানসিকতা এবং ধর্ষণ-সহিংসতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস নারীর প্রতি সহিংসতা, ফ্যাসিবাদী মানসিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তার মতে, নারীদের প্রতি নিপীড়নের বিষয়গুলো পরিকল্পিত, এবং এগুলো বন্ধে রাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন: সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী হেনস্তা করেছে। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আদর্শের ঢাল, উচ্চতম বিদ্যাপীঠ। এখানে শুধু নারী নয়, কোনো পুরুষের পোশাক নিয়ে কথা বলা বর্বরতা, অসভ্যতা। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে আমি এ ধরনের মানসিকতার কোনো সম্পর্ক দেখি না।
প্রশ্ন: আপনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদ আমাদের মাথার মধ্যে গেঁড়ে বসেছে। এ নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী?
উত্তর: ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, কিন্তু আমাদের মানসিকতায় এটি রয়ে গেছে। আমি যা বললাম সেটাই ঠিক, সেটাই মানতে হবে—এটাই তো ফ্যাসিবাদের নতুন রূপ। শাসক চলে গেছে, কিন্তু আমাদের মন থেকে এই ফ্যাসিবাদ দূর করবে কে?
প্রশ্ন: নতুন বাংলাদেশে আপনি এই মানসিকতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন?
উত্তর: এটি দূরীকরণের একটি ধাপ চলছে, কিন্তু পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রী, নারী এবং নাগরিক হিসেবে এসব ঘটনা আমার জন্য লজ্জার। একদল তথাকথিত “তওহিদী জনতা” কীভাবে থানায় ঢুকে এমন সাহস দেখায়? কুরআন আমাদের জন্য সম্মানের, এটি ব্যবসার বস্তু নয় বা কোনো দলীয় প্রচারের মাধ্যম নয়। ইসলাম নারীকে সম্মানের চোখে দেখতে বলে, ওড়না আছে কি নেই, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা হওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, নারী হেনস্তা আমাদের সমাজে মজ্জাগত হয়ে গেছে?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি আমাদের মজ্জাগত হয়ে গেছে। আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে সম্মানিত। তারা দেশ গড়বে, অথচ তাদেরই হেনস্তা করা হচ্ছে! এটি নতুন বাংলাদেশের জন্য কাম্য নয়।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন, ধর্ষণের ঘটনা এখন বেড়ে গেছে। আপনার কী মত?
উত্তর: ধর্ষণের ঘটনা এখন বেশি হচ্ছে, বিষয়টি এমন নয়। তবে আগে হয়েছে বলেই যে এখন হবে, সেটিও কোনো যুক্তি নয়। ধর্ষণ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্ষণের মাত্রা বাড়ছে, বেড়েই চলেছে। আমরা এমন ঘটনা দেখেছি যেখানে ৯৯ বছর বয়সী বৃদ্ধাও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এটি সম্পূর্ণ মানসিকতার প্রতিফলন।
প্রশ্ন: হঠাৎ করে নারীদের প্রতি সহিংসতার বিষয়গুলো সামনে আসছে। আপনি কি মনে করেন এটি পরিকল্পিত?
উত্তর: এটি অবশ্যই পরিকল্পিত। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশে আইন ও বিচারব্যবস্থা রয়েছে। সম্প্রতি গুলশানের এক বাসায় মব নিয়ে হামলা হলো—আমাদের কে অধিকার দিয়েছে অন্যের বাসায় ঢুকে পড়ার? এটি শহীদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
প্রশ্ন: ঢাবির ছাত্রীকে হেনস্তা করা ব্যক্তি অপরাধবোধ অনুভব করেননি। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: আপনি কখনোই কারও পোশাক নিয়ে কথা বলতে পারেন না, এটি অসভ্যতা। কে দাড়ি রাখবে, কে রাখবে না, কে কী পরবে—এটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যায় না।