স্টাফ রিপোর্টার ।।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন যে, ভবিষ্যতে র্যাব আর কখনও কারো নির্দেশে গুম বা খুনের মতো অপরাধে জড়াবে না। তিনি বলেছেন, র্যাব এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে দায়মুক্ত হতে চায়। তিনি গুম, খুন এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
অভিযোগ ও গুম কমিশন
বাংলাদেশে গুম, খুন ও অপহরণের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রচুর। র্যাবের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের মধ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে গুমের ঘটনা বেশ প্রকট হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক আন্দোলন ও বিক্ষোভের সময় র্যাবের কর্মকাণ্ডও অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ সরকার গুম কমিশন গঠন করেছে, যার মাধ্যমে এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার পরিচালনার কাজ চলছে।
এ বিষয়ে র্যাব মহাপরিচালক জানান, “গুম কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং সেখানে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশন যা ব্যবস্থা নেবে, সেটাই র্যাব মানবে।” তিনি আরও বলেন, কমিশন আয়নাঘর পরিদর্শন করেছে এবং ওই জায়গায় অরক্ষিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে, যার কারণে র্যাব সেই অবস্থায় পরিদর্শনকৃত স্থানটি রেখেছে।
নির্যাতন এবং ক্ষমাপ্রার্থনা
এ কে এম শহিদুর রহমান আরও বলেন, র্যাবের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, র্যাবের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে এরকম ঘটনা আর ঘটবে না। তিনি বলেন, “আমরা গুম, খুন এবং অপহরণের অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে দায় মুক্ত হতে চাই এবং কখনোই কারো নির্দেশে গুম খুনে জড়াব না।”
৫ আগস্টের ঘটনার পর গ্রেফতার
৫ আগস্টের পর র্যাবের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর ঘটনায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে পাবনা ও যাত্রাবাড়ী থেকে দুইজনসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে র্যাব ডিজি জানিয়েছেন, “এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সেসব ভিডিও ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
এছাড়া, তিনি ত্বকি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বলেন, ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
পোশাক পরিবর্তন এবং আলাদা আইন তৈরির উদ্যোগ
র্যাব মহাপরিচালক আরও জানান, র্যাবের পোশাক পরিবর্তন নিয়ে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত আসলে তা মেনে নেওয়া হবে। তবে তিনি মনে করেন, পোশাকের চেয়ে র্যাবের ব্যক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন এবং এর জন্য আলাদা আইন তৈরি করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “পোষাক বড় কথা নয়, র্যাবের জন্য আলাদা আইন তৈরির কাজ চলছে।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও র্যাবের ভূমিকা
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, “গত কয়েক মাসে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে জনগণের প্রত্যাশা এখনও পূরণ হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “র্যাবের ১৬ সদস্যের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাই এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ভবিষ্যতে জঙ্গি দমন কার্যক্রমে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করব এবং গুম, খুন ও অপহরণের ঘটনায় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বের করার চেষ্টা করব।”
উপসংহার
র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমানের এই বক্তব্য দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ভাবমূর্তিকে ফের পুনঃমূল্যায়ন করার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ। তবে, সরকারের এবং র্যাবের স্বচ্ছতার ব্যাপারে জনগণের আস্থা অর্জন করতে এই বক্তব্য কার্যকর হতে পারে, যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নির্যাতনের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।