ডেস্ক রিপোর্ট ।।
কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে পাঁচটি বড় কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়।
১. সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত – পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক পানি চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ফলে চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান আপাতত পানি পাবে না।
২. আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ – ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধান স্থলসীমান্ত আটারি-ওয়াঘা বুধবার থেকেই বন্ধ করা হয়েছে। ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের ১ মের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।
৩. সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার – দিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের সব সামরিক উপদেষ্টাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইসলামাবাদ থেকে ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদেরও দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
৪. হাইকমিশনে কর্মীসংখ্যা কমানো – দুই দেশের হাইকমিশনে কর্মরত কর্মকর্তার সংখ্যা ৫৫ থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে।
৫. সার্ক ভিসা বাতিল ও পাকিস্তানিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ – পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সব সার্ক ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং ভারতে তাদের প্রবেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। যাঁরা ইতোমধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগাম শহরের কাছাকাছি বৈসরণ উপত্যকায় বন্দুকধারীদের অতর্কিত হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন ইউএই এবং একজন নেপালের নাগরিকও রয়েছেন। ভারতীয় নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাও নিহত হয়েছেন।
হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও দৃঢ় হবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হামলার পরপরই কাশ্মীরে পৌঁছে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেইন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
কাশ্মীরের পর্যটন খাতের প্রাণকেন্দ্র পেহেলগাম অঞ্চলকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়। ২০২৪ সালে সেখানে প্রায় ৩৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে দেখছে ভারত সরকার।