স্টাফ রিপোর্টার ।।
‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’—এই অমর পঙ্ক্তির রচয়িতা, প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বাংলাদেশের কবিতার আকাশে এক দীপ্ত তারার মতো জ্বলতে থাকা এ কবির জীবনাবসান আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তাঁকে মৃত অবস্থায় আনা হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউর রহমান।
কবিতার মাধ্যমে চিরস্মরণীয়
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ যে জলে আগুন জ্বলে দিয়েই হেলাল হাফিজ বাংলার পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন। তাঁর কবিতা শুধু কাব্যপিপাসুদের নয়, সাহিত্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়েও আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ করে নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় কবিতার পঙ্ক্তি ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’—এটি হয়ে উঠেছে স্বাধিকার ও সংগ্রামের প্রতীক।
দ্রোহ ও প্রেমে অনন্য
লড়াই-সংগ্রাম, প্রেম-বিরহ, দ্রোহ ও অনুভবের অনন্য সমন্বয়ে হেলাল হাফিজের কবিতা পাঠককে স্পর্শ করে যায়। তাঁর অগ্ন্যুৎসব কবিতায় ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা এবং দেশপ্রেমের তীব্রতা। তিনি লিখেছেন:
“ছিল তা এক অগ্ন্যুৎসব, সেদিন আমি
সবটুকু বুক রেখেছিলাম স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রে।
জীবন বাজি ধরেছিলাম প্রেমের নামে,
রক্তঋণে স্বদেশ হলো।”
সাহিত্যজগতে বিরল খ্যাতি
প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের প্রায় তিন দশক পর ২০১২ সালে আসে দ্বিতীয় গ্রন্থ কবিতা একাত্তর এবং ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় বেদনাকে বলেছি কেঁদো না। এত কম লিখেও হেলাল হাফিজ যে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তা বাংলা সাহিত্যজগতে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
বিদায়: এক কবিতার মহাকাব্য
হেলাল হাফিজের প্রয়াণে শুধু সাহিত্য জগৎ নয়, পুরো জাতি এক কবিসত্তার চিরবিদায় অনুভব করছে। যিনি তাঁর কলম দিয়ে গণমানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন, দ্রোহে জ্বালিয়েছেন আগুন এবং প্রেমে ছড়িয়েছেন অনুভূতির নীল মাধুর্য।
শুভ বিদায়, কবি। আপনার কবিতা থেকে উৎসারিত আগুন ও ভালোবাসা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান থাকবে।