স্টাফ রিপোর্টার, ঢাবি প্রতিনিধি, গাজীপুর প্রতিনিধি ।।
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি কুর্মিটোলাস্থ এ কে খন্দকার ঘাটি থেকে উড্ডয়নের পর মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। বিকেলেই আইএসপিআর নিশ্চিত করে, এই দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত এবং অন্তত ১৭১ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। আজ রাতে আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ফাতেমা আক্তার (৯), সামিউল করিম (৯), রজনী ইসলাম (৩৭), মেহনাজ আফরিন হুরায়রা (৯), শারিয়া আক্তার (১৩), নুসরাত জাহান আনিকা (১০), সাদ সালাউদ্দিন (৯) ও সায়মা আক্তার (৯)-এর মরদেহ অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, বিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে পাইলট তৌকির ইসলাম জনবহুল এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা সম্ভব হয়নি এবং বিমানটি স্কুল ভবনের দ্বিতীয় তলায় আছড়ে পড়ে। এতে পাইলটসহ বহু শিক্ষার্থী আহত হন এবং আগুন ধরে যায়।

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ এক শিক্ষার্থী বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। ২০২৫ সালের ২১ জুলাই তোলা ছবি
ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে একযোগে ছুটে যেতে দেখা গেছে আহতদের। সবচেয়ে বেশি দগ্ধ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, যেখানে এখনো পর্যন্ত ৭০ জন চিকিৎসাধীন। এছাড়া সিএমএইচে ১৭ জন ভর্তি আছেন, যাদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জন, কুর্মিটোলা, লুবনা, ক্রিসেন্ট, কুয়েত মৈত্রী ও ঢাকা মেডিকেলে আরও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকদের ভাষায়, অধিকাংশের শরীরের ৬০–৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
দুর্ঘটনার পরপরই জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ছুটে যান অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা। হাসপাতালের সামনে বিপুল ভিড় জমে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এদিকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম সব হাসপাতালে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই মাইলস্টোন স্কুলের সামনে ভিড় করেন অভিভাবকরা। কেউ সন্তানকে খুঁজে পেয়েছেন আগুনে পুড়ে যাওয়া অবস্থায়, কেউ এখনো জানেন না তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে। আবুল কালাম আজাদ নামের এক অভিভাবক জানান, ‘লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল, সব পুড়ে গিয়েছে। চিনতেই পারছি না।’ কেউ কাঁদছেন, কেউ হাসপাতালের বারান্দায় ছুটছেন প্রিয়জনের সন্ধানে।

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ এক শিক্ষার্থী বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। ২০২৫ সালের ২১ জুলাই তোলা ছবি
পাইলট তৌকির ইসলাম ছিলেন প্রথমবারের মতো একা ফ্লাইটে। পরিবারের সদস্যরা সকালে ছিলেন আনন্দিত, দুপুরের পর জানতে পারেন দুর্ঘটনার কথা। রাজশাহীর উপশহরের বাসায় চলছে শোকের মাতম।
এই দুর্ঘটনায় মঙ্গলবার সারা দেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে, সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার তিন দিনের সব কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার জানিয়েছেন, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হবে এবং চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। আইএসপিআরও বলেছে, বিমানবাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে।
নিখোঁজ বা আহতদের খোঁজে স্বজনরা নিচের নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করতে পারবেন:
- মিলিটারি রেস্কিউ ব্রিগেড: 01769024202
- সিএমএইচ বার্ন ইউনিট: 01769016019
- সিএমএইচ ইমার্জেন্সি: 01769013311
- মাইলস্টোন স্কুল অ্যাডমিন: 01814774132
- উপাধ্যক্ষ: 01771111766
- জাতীয় হটলাইন: 999