মঙ্গলবার, আগস্ট ১৯, ২০২৫

গবেষণা কর্মকর্তার বদলি ঠেকাতে প্রকল্প পরিচালকের দৌড়ঝাঁপ

সরকারি কলেজগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্প

by ঢাকাবার্তা
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইব্রাহিম মিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ।। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় সরকারি কলেজগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা (অর্থ ও ক্রয়) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহিম মিয়ার বদলি ঠেকাতে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রফেসর ড. মো. মাহমুদ হোসেন দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

গত ১৩ আগস্ট ইব্রাহিম মিয়াকে বদলির আদেশ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তা সরিয়ে ফেলা হয়।

অভিযোগ উঠেছে যে, পরের দিন ১৪ আগস্ট প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মাহমুদ হোসেন সকাল থেকে মন্ত্রণালয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন ইব্রাহিম মিয়ার বদলি রোধ করতে। একই সঙ্গে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এসএন তরুণ দেও তার বদলি ঠেকানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।

জানা গেছে, তরুণ দে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত শিকদারের সঙ্গে মিলে এই প্রকল্পে ঠিকাদারি কাজ করতেন। জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে এই প্রকল্পে কর্মরত গবেষণা কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়াকে সম্প্রতি ফরিদপুরের বীরশ্রেষ্ঠ আবদুর রউফ সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৭-০৮ সেশনের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মিয়া ছিলেন শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক।

২০১৮ সালে প্রকল্প শুরু হলে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বদলি নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রথম নিয়োগের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন পান। বিগত ছয় বছর এই প্রকল্পে কাজ করার সময় তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিয়মানুসারে, বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণের কাজ ৮৫ শতাংশ সমাপ্ত হলে অন্যান্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনার কাজ শুরু করতে হয়। কিন্তু এই প্রকল্পে এই নিয়ম মানা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ইব্রাহিম মিয়া তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে অবৈধভাবে এই প্রকল্পে পদায়ন নিয়েছেন দু’টি বিধি ভঙ্গ করে। বিধি অনুসারে, চাকরির প্রথম দুই বছর পূর্ণ না হওয়ার আগে ঢাকায় পদায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি অবৈধ ক্ষমতার বলে এক বছর না হতেই ঢাকায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে পদায়ন নেন।

ইব্রাহিম মিয়ার বদলি ঠেকাতে মন্ত্রণালয়ে দৌঁড়ঝাঁপের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমি ভীষণ অসুস্থ। পরে আপনার সঙ্গে কথা বলব।’
ওয়েবসাইট থেকে আদেশ সরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বদলির আদেশের স্বাক্ষরকারী উপসচিব মো. আব্দুল কুদ্দূস বলেন, ওয়েবসাইটে কেন দেখা যাচ্ছে না, সেটি তো আমরা বলতে পারব না। আইসিটির দায়িত্বে যিনি আছেন, তাদের কাছে জানতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে সরানো হয়নি।

সাবেক যুবদল নেতা এসএন তরুণ দে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ওরা আমার কোনো ভাইও লাগে না, চাচাও লাগে না, আমাদের লোকও না। অভিযোগ কে দিয়েছে জানি না, তবে আমার দৌড়ঝাঁপের অভিযোগ ভুল। এ বিষয়ে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বদলি ঠেকাতে দৌড়ঝাঁপের অভিযোগের বিষয়ে ইব্রাহিম মিয়া বলেন, এ ধরনের কোনো কিছু আমি জানি না। সংশ্লিষ্ট কলেজে ইতিমধ্যে আমি খবর নিয়েছি। আমার দিক থেকে বদলি ঠেকাতে কোনো কিছু করছি না।

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা আদায়ের বিষয়ে প্রথমে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো দলের রাজনীতি করিনি।’ পরবর্তীতে এই প্রতিবেদক তাকে শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাতে আপনার সমস্যাটা কী? আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে তো আমি বাধ্য না।’

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net