স্টাফ রিপোর্টার ।।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ ১২ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনের আমীর মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে দাবি করা হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন দিয়েছে এবং তা বাতিল না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
সমাবেশে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশে নারীবাদের নামে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘হঠকারী সিদ্ধান্ত’ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
১২ দফা দাবিতে যা রয়েছে:
১. নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন বাতিল করে নতুন কমিশন গঠন।
২. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন।
৩. শাপলা ও জুলাই গণহত্যার বিচারে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও দ্রুত বিচার।
৪. আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল ঘোষণা ও তাদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ।
৫. ধর্ম অবমাননায় সর্বোচ্চ শাস্তির আইন প্রণয়ন।
৬. চট্টগ্রামে আলিফ হত্যায় উস্কানিদাতা চিন্ময় দাসের জামিন বাতিল ও বিচার।
৭. আলেম-ওলামা ও ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও দমন-পীড়নের বিচার।
৮. গাজা ও ভারতের মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক উচ্চকণ্ঠ এবং ইসরাইলি-ভারতীয় পণ্য বর্জন।
৯. শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
১০. রাখাইনকে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার।
১১. পার্বত্য চট্টগ্রামে মিশনারিদের অপতৎপরতা বন্ধ ও দাওয়াতি কার্যক্রমে সহায়তা।
১২. কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা ও তাদের কার্যক্রম বন্ধ।
সমাবেশে হেফাজতের নায়েবে আমীর ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সতর্কতা জানিয়ে বলেন, “জাতি যদি নেমে যায়, হেফাজত যদি মাঠে নামে, তাহলে কোনো উপদেষ্টা দেশে থাকতে পারবে না।”
তাহরিকে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের আমীর ড. মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, বাক-স্বাধীনতার নামে ইসলামবিরোধীদের রক্ষা করা চলবে না। একইসঙ্গে মানবিক করিডোরের বিরোধিতা করে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান।
‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সমাবেশে বলেন, “২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো আমরা আবার স্বাধীন বাংলাদেশে সমাবেশ করতে পেরেছি।” তিনি নারী কমিশনের মতো ‘অপ্রয়োজনীয়’ ইস্যু বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের প্রকৃত সমস্যায় মনোনিবেশের আহ্বান জানান।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজী বলেন, “সংবিধান থেকে বহুত্ববাদ বাদ দিতে হবে এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।” দাবি মানা না হলে আলেম সমাজ অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া সমাবেশে ভোর থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজারো হেফাজত কর্মী সমবেত হন। দুপুরের আগেই উদ্যান ও আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বক্তৃতা ও ঘোষণাপত্র পাঠের পর শেষ হয় কর্মসূচি।