কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ।।
কুষ্টিয়ার কালীশংকরপুর এলাকার এক মেসবাড়ি থেকে গোপন অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে। মঙ্গলবার ভোরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে তাঁকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মেসের ছাত্রদের বরাত দিয়ে জানা যায়, যে ফ্ল্যাটে সুব্রত বাইন ছিলেন, তা দেড় মাস আগে ভাড়া নিয়েছিলেন পাশের বাড়ির দম্পতি হেলাল উদ্দিন ও মিনারা খাতুন। অনলাইনে পোশাক ব্যবসার কথা বলে তাঁরা ছয় হাজার টাকায় নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। এরপর ভবনের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে তার সংযোগ দেন নিজেদের বাড়িতে। ধীরে ধীরে ফ্ল্যাটটি রূপ নেয় গোপন আস্তানায়, যেখানে বাইরের খাবার এনে চলছিল অবস্থান। ছাত্ররা জানান, ওই ফ্ল্যাটে রান্না পর্যন্ত হতো না।
মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত চলা এই অভিযানে সেনাবাহিনীর পাঁচ-ছয়টি গাড়ি অংশ নেয়। সেনাসদস্যরা ছাত্রদের কক্ষ বন্ধ করে রেখে তল্লাশি চালান। অভিযানের একপর্যায়ে মুখ ঢাকা ও দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে একটি কালো মাইক্রোবাসে তোলা হয়। তাঁর সঙ্গে দড়ি বাঁধা অবস্থায় আরেক যুবককেও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানা যায়, এই দাড়িওয়ালা ব্যক্তি সুব্রত বাইন।
গ্রেপ্তারের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই আতঙ্কে মেস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ছাত্ররা। বিকেল ৪টার দিকে দেখা যায়, অন্তত ১০ জন ছাত্র ব্যাগ গুছিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। দীর্ঘদিনের মেসবাসিন্দা শাহীন আলম জানান, আতঙ্ক থাকলেও তিনি থেকে যাচ্ছেন।
যে দম্পতি ভাড়া নিয়েছিলেন ওই ফ্ল্যাট, তাদের মধ্যে মিনারা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা পরিস্থিতিতে ফেঁসে গেছেন। অভিযুক্তদের সঙ্গে তাঁদের কোনো আত্মীয়তা নেই। তাঁর স্বামী হেলাল উদ্দিন আগে দুবাই প্রবাসী ছিলেন, এখন জমি-ফ্ল্যাট ব্যবসা করেন। বর্তমানে তাঁর অবস্থান অজানা।
এই ঘটনার পর পুরো কালীশংকরপুর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এভাবে সাধারণ মেসে আশ্রয় নেওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সুব্রত বাইনের সঙ্গে আরও শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ মোট আটজনকে আটক করা হয়েছে।
শহরের শান্তিপূর্ণ এলাকায় এভাবে সন্ত্রাসীদের আস্তানা গড়ে ওঠা এবং সাধারণ ছাত্রদের ব্যবহার করায় উদ্বেগ বাড়ছে। যৌথ বাহিনীর সফল অভিযান আবারও প্রমাণ করল, অপরাধী যতই গা-ঢাকা দিক না কেন, আইনের হাত থেকে রেহাই নেই।