স্টাফ রিপোর্টার ।।
খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল পরিচয় গোপন করে এখন ভারতীয় নাগরিক বিধান মল্লিক। তার নতুন পরিচয়ে বাবার নাম শেখ আবু নাছের থেকে বদলে হয়েছে মুদিন্দ্রনাথ মল্লিক। ভারতীয় আধার কার্ডে নাম পরিবর্তন করে তিনি অবাধে চলাফেরা করছেন ভারতের বিভিন্ন স্থানে।
এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। দেশের সচেতন মহলও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাতিজা ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই হওয়ার পরও কীভাবে তিনি ভুয়া পরিচয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেলেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ জুয়েল নামে পরিচিত এই ব্যক্তি ভারতীয় নথিতে বিধান মল্লিক নামে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আধার কার্ড ও অন্যান্য সরকারি কাগজপত্রে তার নতুন পরিচয় বৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি কীভাবে এসব নথি সংগ্রহ করলেন, তা নিয়ে প্রশাসনের তদন্ত শুরু হয়েছে।
ঢাকাবার্তার কলকাতা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভারতের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। বিশেষত, একজন বাংলাদেশি নাগরিক কীভাবে ভারতীয় পরিচয়ে সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, “শেখ জুয়েল দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বাইরে ছিলেন। এখন তার নতুন পরিচয় সামনে আসায় আমাদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
পশ্চিমঙ্গের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের দাবি, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ না কেউ এই পরিচয় পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।
ভারতীয় নির্বাচন কমিশন ও অভিবাসন দপ্তর ইতোমধ্যেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সূত্র জানায়, শেখ জুয়েল কীভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেলেন, তার আইনি দিক যাচাই করা হচ্ছে। যদি প্রতারণার মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রমাণ মেলে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে এমন বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের বিষয়।
দেশের বিশিষ্টজনেরা বিষয়টি নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে বলছেন, একজন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য ও সাবেক সাংসদ যদি এভাবে পরিচয় পরিবর্তন করতে পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষের তথ্য কতটা নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং দুই দেশের তথ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা প্রকাশ করে।
এখন দেখার বিষয়, শেখ জুয়েলের বিরুদ্ধে ভারত ও বাংলাদেশ কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং এই বিতর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।