এন্টারটেইনমেন্ট রিপোর্টার ।।
‘সাব জাগাহ কানেকশনস হে মেরে। এনএসআই, জামায়াত…’— ২০২৩ সালে ভারতের হিন্দি ভাষার স্পাই থ্রিলার চলচ্চিত্র ‘খুফিয়া’য় নিজের গোয়েন্দাচরিত্রের ডায়লগ ছিলো আজমেরী হক বাঁধনের। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন তিনি। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই বাঁধন এখন নতুন করে আলোচনায় জামায়াতকে কেন্দ্র করে।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এ যেন এক অভাবিত ঘটনা। জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ‘ইতিবাচক অবস্থান’ ব্যক্ত করেন আলোচনায় দেশের খ্যাতনামা কয়েকজন চলচ্চিত্র নায়িকা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তারুণ্যের সেনসেশন-ক্রাশ ইয়ামিন হক ববি ও লাক্সসুন্দরী আজমেরী হক বাঁধন।

আজমেরি হক বাঁধনের ফেসবুকের স্ক্রিনশট
শনিবার (২৪ আগস্ট) তারা দুজনেই নিজেদের ফেসবুক আইডি-পেজে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। আর শেয়ার করার পর পক্ষে-বিপক্ষে উভয়ধারার মতামত পাচ্ছেন দেশের দুই সুপরিচিতি তারকা।
জামায়াতের সামাজিকমাধ্যমের ভেরিফাইড একাউন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত শনিবার (২৪ আগস্ট) হবিগঞ্জে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বন্যার্তদের অনুদান দেওয়ার আগে তিনি উপস্থিত সাংবাদিক, ভিডিওগ্রাফার ভিডিওম্যান, ইউটিউবারদের প্রতি অনুরোধ করেন, ‘তারা যেন মানুষকে অনুদান দেওয়ার দৃশ্য না দেখান’।

ইয়ামিন হক ববির ফেসবুকের স্ক্রিনশট
১৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি শেয়ার করেছেন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মুজিব। ফেসবুকে তার পরিচয় তিনি উল্লেখ করেছেন, কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের একজন সদস্য।
শনিবার রাত ৯.৪২ এ আজমেরি হক তার ভেরিফাইড আইডিতে ‘লাভ ইমু’সহ শেয়ার করেন জামায়াত আমিরের বক্তব্যের ভিডিও। আর তাতেই ছলকে উঠে কমেন্টের ঢেউ। একজন মন্তব্য করেন, ‘আপনার জামায়াতে আস্থা দেখার জন্যই ওয়েট করছিলাম।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘নুর থেকে কাদের থেকে জামায়াত কেউই তো বাদ যাচ্ছে না আপা। আয়নাবাজি ২ বানাবো একদিন সেখানে নায়ক ও নায়িকা দুটোই হবেন আপনি। শ্রদ্ধা রেখে গেলাম।’
কারও প্রশ্ন জামায়াত আমির ‘এইটুকু কেন ক্যামেরার সামনে বললেন?’ কারও পরামর্শ বাঁধনের প্রতি, ‘সাবধানে থাকিও বাধন পর্দার আড়ালে।’ কেউ-কেউ অবশ্য পাশে রয়েছেন কানফেরত বাঁধনের, মন্তব্য— ‘ইসলাম সবার জন্য। শুধু বোরখা পড়া আর নামাজিদের জন্যেই ইসলাম না। আমিরে জামায়াত আপামর জনসাধারণের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। বাধনকে যারা টিটকারি করছেন ভুল করছেন। খুবই নিকৃষ্ট এবং লজ্জাজনক কাজ করছেন।’

বলিউডের খুফিয়া ছবির একটি দৃশ্যে বাঁধন
শনিবার রাত দশটায় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের ভিডিওটি শেয়ার করে ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ববি লিখেন, ‘ দিস ইজ দ্য বিউটিফুল ওয়ে টু গিভ।’ সঙ্গে যোগ করে লাভ ইমু। জেন-জি ও তার উত্তর প্রজন্মের ক্রাশ হিসেবে পরিচিত ইয়ামিন হক ববি তার ভিডিও প্রসঙ্গে ঢাকাবার্তাকে একটি অডিও পাঠিয়েছেন।
সেখানে তিনি বলেন, ‘উনার কথাটা (জামায়াত আমির) একদমই বিশ্বাস করি আমি এবং মানি। অনুদান, দান যখন দেখিয়ে দেওয়া হয়, সেটা আসলে ভালো নয়। আমরা হয়তো ছবি তুলি কখনো-কখনো খুশিমনে, কিন্তু উনি যেটা বলেছেন, সেটাই কিন্তু সঠিক।’
জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা ও প্রযোজকের ভাষ্য, ‘অনুদান দেওয়ার নিয়ম এটাই যে, কেউ জানবে না। আমার খুব ভালো লাগছে। মানুষ জানবে কি জানবে না, সেটা বিষয় নয়, আসল হচ্ছে মানুষের কাছে পৌঁছানো। এ কারণে ভিডিওটি শেয়ার করা। নাথিং এলস।’

ইয়ামিন হক ববি
ববির ভক্ত রিমন খান। ফেসবুকে ববির শেয়ার করা ভিডিওর নিচে তার কমেন্ট, ‘এই ভিডিওটা শেয়ার করে আপনি প্রমান করলেন আপনি ভালো অভিনেত্রী পাশাপাশি সচেতন এবং ভাল মনের একজন মানুষ”আপনার প্রতি সম্মান অনেক বেড়ে গেল।’
জহির বিন বাশার নামে আরেক ভক্ত লিখেছেন, ‘স্যালুট আপনাকে! মহান আল্লাহ আপনাকে দ্বীনের জন্য কবুল করুন।’ যদিও কেউ-কেউ প্রিয়নায়িকার প্রতি কেটেছেন টিপ্পনিও। দিয়েছেন ‘পর্দার’ পরামর্শ।
দেশের প্রখ্যাত দুই নায়িকার সামাজিকমাধ্যমে জামায়াত আমিরের ভিডিও শেয়ার নিয়ে তারকাদের অন্দরমহলেও শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ-কেউ বলছেন, যেখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য জামায়াতের, সেখানে দৃশ্যমাধ্যমের কাজে নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা অনেকটাই। সেখানে আমিরকে প্রচারণার বস্তু হিসেবে গড়ে তোলা ভবিষ্যতের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে।

আজমেরি হক বাঁধন
কারও-কারও মতামত, ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতা করেছিলো জামায়াত। দলটির নেতাদের নেতৃত্বে তখন মুক্তিকামি মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্ত করার সমস্ত প্রচেষ্টাই জামায়াত চালিয়েছে। এমনকী বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ও দলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় ‘নিষিদ্ধ’। সেক্ষেত্রে এ ধরনের সংগঠনের নেতারা চাইবেন, যেকোনওভাবে সাধারণ মানুষের সামনে নিজেদের তুলে ধরা।
এক্ষেত্রে কি তাহলে বাঁধন ও ববি তাদের এগিয়ে দিলেন? এই প্রশ্নটাও চুপিসারে, আড়ালে তুলছে ঝড়।