রবিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৫

শ্রেয়া গুহঠাকুরতা : সঙ্গীতে নিমগ্ন অনুরাগিণী

by ঢাকাবার্তা
শ্রেয়া গুহঠাকুরতা
সৈয়দ হাসসান ।।

সঙ্গীত ও শ্রেয়া, মিলেমিশে একাকার। রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক অস্তিত্বের নামই যেনো শ্রেয়া গুহঠাকুরতা। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত এই শিল্পী নিতান্ত শৈশবেই শুরু করেন নাচ ও গান। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র চার বছর বয়সেই মা শাশ্বতী গুহ ঠাকুরতার কল্যাণে পেয়েছেন শান্তিনিকেতনের কিংবদন্তী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহচর্য। বাড়ির পরিবেশেও ছিল এক উদাত্ত দখিন জানালা। যেখানে উন্মুক্ত ছিল বিশ্বসঙ্গীত, নাটক, অভিনয়, নাচ, এক অনাবিল মুগ্ধতা ও সংস্কৃতি চর্চার নিরন্তর আবহ।

১৯৭৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার এক বনেদি সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্ম নেয়া শ্রেয়া দীর্ঘদিন নাচ শিখেছেন, অভিনয় করেছেন, তারপর প্রণত হয়েছেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের অতল সুর মূর্ছনায়।  গুহ-ঠাকুরতা পরিবারের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চার রেওয়াজ বহু যুগের পরম্পরা। দাদু শুভ-গুহঠাকুরতা, জেঠু রণ গুহঠাকুরতা, মা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শাশ্বতী গুহঠাকুরতা; বাবা বিশ্ব গুহঠাকুরতা কাজ করেছেন সত্যজিত্ রায়ের ছবিতেও, অভিনয়, গান সুর সঞ্চারে ঋদ্ধ পরিবারের সুকন্যা শ্রেয়া গুহঠাকুরতা।

শ্রেয়া গুহঠাকুরতা

শ্রেয়া গুহঠাকুরতা

রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী শ্রেয়া গুহঠাকুরতাকে প্রতিটি মর্মে মুগ্ধ করে, ঋদ্ধ করে। দীর্ঘদিন থেকে তিনি প্যারিস প্রবাসী, স্বামী আইনজীবী সুজয় ও একমাত্র ছেলে আফসানকে নিয়ে তার একান্ত ভুবন।  সারাবছরই রবীন্দ্রনাথের গানের মঞ্জরী সাজিয়ে শ্রেয়া গুহঠাকুরতা ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। ইতিমধ্যেই তার ১৭টি রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি প্রকাশ হয়েছে। বাংলাদেশের ডেলভিসতা ফাউন্ডেশন ও বেঙ্গল ফাউণ্ডেশন থেকেও প্রকাশিত হয়েছে তার সিডি।

দীপার প্রেম ও অন্তর্ধান চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেন তিনি।  প্রতিনিয়ত রবীন্দ্রনাথের গানের বাণীর বিস্ময়তা তাকে নব নব জীবনবোধে সমৃদ্ধ করে। দীর্ঘ দেড় দশক তিনি ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকে পিয়ানো শিখেছেন। নাচ শিখেছেন। পিয়ানো তিনি নিয়মিত বাজালেও জীবনের পরম আরাধনা হিসেবে বেছে নিয়েছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত।

শ্রেয়া গুহঠাকুরতার অ্যালবামSave

শ্রেয়া নিয়মিত একক অনুষ্ঠান করে  থাকেন। তার গানের মর্ডানিজম স্টাইল নিয়ে জানতে চাওয়া হলে শ্রেয়ার সহস্য উত্তর- ‘রবীন্দ্রনাথ তো এক অতি আধুনিকতম মহাপুরুষ ছিলেন। তার উদারতা, শিল্পিত রূপের আবেশ প্রতিনিয়ত আমাদের আজকের আধুনিকতম সময়ে দাঁড়িয়েও বিস্মিত করে— ফুরায় না তার প্রাণের উত্সরণ। আমার গানেও হয়ত সেই দোলা আছে, এর কারণ আমার বেড়ে ওঠা। উন্মুক্ত আলোয় পূর্ণ ছিল বাড়ির পরিবেশ। সব ধরনের গান, ইন্সট্রুমেন্টস শোনার চল ছিল। এখনও আমাদের কোলকাতার বাড়িতে ২টি পিয়ানো আছে!’

গান ছাড়াও শ্রেয়ার অভিলাসী মন ভ্রমণপিয়াসী! ভীষণ ভালোবাসেন ঘুরে বেড়াতে, চাইনিজ-ইতালিয়ান, বাঙালি খাবারের রসনায় তৃপ্ত হতে। আর তাকে আকৃষ্ট করে মানুষ ও মানবতা। বিশ্বময় ঘুরে বেড়িয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন মানুষে মানুষে, দেশে-দেশে প্রভেদ আছে, আছে পাসপোর্টের নিয়মতান্ত্রিকতা! কিন্তু মানুষ ও মানবতার মাঝে আছে অসীমের সুর।

 শ্রেয়া গুহঠাকুরতা ঢাকা

সাজটাকে একটু অন্যভাব দেখেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিতে সুন্দরের বন্দনা নিরন্তর। শ্রেয়াও সেই সৌন্দর্যের সৌম্যতাকে ধারণ করেন সুরের অনুরণনে। রাধার রঙ নীল ভীষণ প্রিয় তার, সেই সঙ্গে সাদার শুভ্রতা, হলুদ, মেঘরঙ, রূপালি যাই থাকুক শাড়ির বেজ কালার, গলার মালাটাও থাকে সৌখিন ও বর্ণময়।

ওয়েস্টার্ন, বাঙালি সব পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্য হলেও ‘শাড়ি’ ভীষণ প্রিয় তার। বাংলাদেশে আসলেই জামদানী, টাঙ্গাইল শাড়ির সংগ্রহ তৃষ্ণাটা যেন বেড়ে যায়, ভর করে শখের বাহার। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষ ও শ্রোতা শ্রেয়াকে আবেগাপ্লুত করে। সুর মঞ্জরী নিয়ে বার-বারই আসতে চান শ্রেয়া গুহঠাকুরতা।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net