রবিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৫

দাবানলে গৃহহীন মানুষ, দুঃসময়ে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি

“মাসে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়ায় একটি বাড়ি চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন বাড়িওয়ালা বলছেন, ৩০ হাজার ডলার না দিলে সেই বাড়ি পাব না।”

by ঢাকাবার্তা
অভিজাত আবাসন থেকে দাবানলে পোড়ার একটি দৃশ্য

ডেস্ক রিপোর্ট ।। 

পাঁচ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক প্যালিসেইডস দাবানলে সবকিছু হারিয়েছেন মায়া লিবারম্যান। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। এই পরিস্থিতিতে তিনি একটি বাসা খুঁজতে মরিয়া। কিন্তু অসাধু বাড়িওয়ালারা এই দুঃসময়ের সুযোগ নিচ্ছেন। তাঁরা বাড়িভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন এলাকায় বাড়িভাড়ার এই অসঙ্গতি নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে।

পেশায় স্টাইলিস্ট মায়া বলেন, “মাসে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার ভাড়ায় একটি বাড়ি চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন বাড়িওয়ালা বলছেন, ৩০ হাজার ডলার না দিলে সেই বাড়ি পাব না। অন্যরা বেশি ভাড়া দিয়ে নিতে প্রস্তুত, এমন দাবিও করেছেন বাড়িওয়ালা।” এ ধরনের ঘটনার জন্য তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করে অর্থ উপার্জনের এই প্রবণতা অমানবিক।”

দাবানলের ভয়াবহতা

গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দাবানল এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের পশ্চিমাঞ্চলে সান্তা মোনিকা থেকে মালিবু এলাকা পর্যন্ত দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এতে পুড়ে গেছে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এলাকা। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১০ হাজার স্থাপনা। শহরটির ১.৫ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্যাসিফিক প্যালিসেইডসের মতো বিলাসবহুল এলাকা দাবানলের কবলে পড়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। সেখানে একসময় বিলি ক্রিস্টাল ও কেট বেকিনসেলের মতো তারকারা বসবাস করতেন। এখন এলাকাটি পরিত্যক্ত। যাঁদের ঘরবাড়ি এখনো টিকে আছে, তাঁদেরও সেখান থেকে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে।

দাবানলে ছাই হয়ে যাওয়া সমুদ্রের তীরবর্তী এক আবাসিক এলাকা

দাবানলে ছাই হয়ে যাওয়া সমুদ্রের তীরবর্তী এক আবাসিক এলাকা

বাড়িভাড়ার সংকট

দাবানলের কারণে লস অ্যাঞ্জেলেসে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু বাড়িওয়ালা। বাড়িভাড়ার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা ৬৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ব্রায়ান বলেন, “দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি ছোট্ট ভাড়া করা ভবনে বাস করছিলাম। দাবানলে আমার সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন আমি যে পেনশন পাই, তা দিয়ে নতুন বাড়ি ভাড়া করার সামর্থ্য নেই।”

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বোন্টা এই পরিস্থিতিতে বাড়িওয়ালাদের সতর্ক করে বলেছেন, “জরুরি পরিস্থিতিতে বাড়িভাড়া বাড়ানো অবৈধ। যারা এমন করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন অনুযায়ী, জরুরি অবস্থার সময় বাড়িভাড়া ১০ শতাংশের বেশি বাড়ানো নিষিদ্ধ। দোষীদের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।”

আশ্রয়ের খোঁজে গৃহহীন মানুষ

দাবানলের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষদের কেউ কেউ গাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন, কেউ আবার লস অ্যাঞ্জেলেসের বাইরের এলাকায় অস্থায়ী আশ্রয় খুঁজছেন। টিভি প্রযোজক অ্যালেক্স স্মিথ বলেন, “আমার কয়েকজন বন্ধু শহরের বাইরে হোটেল ভাড়া করেছে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়েছে।”

দাবানলের পাশাপাশি আশ্রয়হীনতার এই সংকট গড়পড়তা আয়ের মানুষদের জীবনে আরও অন্ধকার যোগ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাবানল ও এর পরবর্তী সংকট মোকাবিলায় প্রশাসনের দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। একই সঙ্গে বাড়িভাড়ার নিয়মিত মনিটরিং জরুরি, যাতে কেউ মানুষের দুর্ভোগের সুযোগ নিতে না পারে।

You may also like

প্রকাশক : মানজুর এলাহী

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

ব‌ইচিত্র পাবলিশার্স
প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@dhakabarta.net